যারা এখনো শুধুই বন্ধু, বন্ধুর চেয়ে বেশী হয়েও অন্ধ, কিংবা জানালার একটা পাল্লা বন্ধ, একটু ভাল আর একটু মন্দ

তাদের জন্যেই কিছু এবড়ো খেবড়ো ছন্দ, তাদের জন্য কবিতা-গল্প, অল্প স্বল্প প্রেম, আড্ডা, হঠাৎ মেঘ এবং বৃষ্টি।

কিছু সম্ভাবনা শিল্পের সংশ্রব পেয়েছে, কিছুটা হয়েছে ফাঁকি।
কিছু স্বপ্নঘাতক, আর কিছুটা আমার মধ্যে বাকি।
কিছু প্রশ্ন প্রত্যয়, কিছুটা ছুঁয়েছে তোমার চোখ।
কিছু সংকল্প যৌনতার জরায়ু প্রাচীরে, ওর পৃথিবীটাও আমাদের হোক। 
কিছু মাতৃয় প্রসব বেদনায়, কিছুটা অঙ্গার প্রশমিত।
কিছু বিশ্বাস আশ্রিত, কিছুটা যোগ্যতার ভয়ে ভীত।
কিছু সম্পর্ক সমকামিতা, কিছু দাম্পত্য মৃত।

কিছু প্রেম খাঁটি, কিছুটা একঘেয়ে অবসৃত। 

ল্যাপটপ

টিক টিক টিক টিক টিক টিক টিক টিক

মানুষের জীবনে অনেকগুলো স্তর থাকে, যাকে পাতি ভাষায় বলে লেয়ার। একের পর এক স্তর জমা হয়ে মানুষ তৈরি হয়। জন্ম নেয় মানুষের স্বত্বা, তার প্রেম, ভালোবাসা, স্পৃহা, আকাঙ্খা। এই স্তর গুলো কখনো সামনে আসেনা আমাদের। কিন্তু কখনো কখনো আমাদের দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহের ফাঁক খুঁজে বেরিয়ে পড়ে সেই স্রোত। ভাসিয়ে দেয় আমাদের আত্মিক অনুভব। কিছু ঘটনা, কিছু মুহূর্ত, কিছু পরম্পরা, একসাথে বুনে গিয়ে সৃষ্টি করে সেই রকম কিছু আশ্চর্য মুহূর্তের। এরকম কিছু Instance of time আমাদের কাছে আসে, আবার হাত গলে চলে যায়।

টিক টিক টিক টিক টিক টিক টিক টিক           

ঘড়ির কাটা চলতে থাকে। একটার পর একটা ঘর পার হয়ে কোনও এক অনন্তকে লক্ষ করে। তার মাঝে perturbation হয়ে বেঁচে থাকে আমাদের জীবন। এই আজ যে রকম হঠাৎ করে একটা ফিল্ম দেখলাম। ফিল্মটা দেখার সময় কিছু একটা expectation ছিল। সেটা পূরণ হল না শেষ অব্দি। একটা ল্যাপটপ নিয়ে কিছু মানুষের আবর্তন এবং তাকে নিয়ে তাদের কারোর ভেঙ্গে পড়া বা পাল্টে যাওয়ার কাহিনী। ছবিটিতে ল্যাপটপের ভূমিকা যেন সেই  Infinite time এর মত। যার কোনও এক আদি আছে, কিন্তু অন্ত নেই। একের থেকে বহু হাতে ঘুরে চলে যায় কোন এক মেঘময় জগতের অন্ধকারে। হয়তো আরও কিছু নতুন চরিত্রের জীবনের ধারার সাথে মিলে যেতে। কিছু মানুষের স্মৃতি-বিস্মৃতির ভিড়ে ভাসতে ভাসতে, তাদের জীবনের অনেক না বোঝা মানে, না চেনা মানুষকে কাছে বা দূরে ঠেলে দিয়ে ভেসে চলে ল্যাপটপ।



ভেবেছিলাম ছবিটিতে আরও কিছু লেয়ার থাকবে অন্যান্য কিছু ছবির মত। তাই প্রাথমিক হতাশা কাটানোর জন্য কবিগুরু শুভদীপ দেবের কিছু লাইন মাথায় এল। সেগুলো হয়তো সার্বিকভাবে কেউই ছবির বিষয় বা বস্তু কোনোটির সাথে মেলেনা, কিন্তু একটা অনুপ্রেরণা পেলাম ভাবার। তাই ভাবলাম, আর কোথায় যেন ঐ অনুরণনটুকু খুঁজে পেলাম।  Space-time continuum এর ঐ অনন্ত সমুদ্রে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে নিজেকে, হারিয়ে যাওয়া কিছু মানুষকে, ফিরে পাওয়া কিছু মানুষকে খুঁজে পেতে ভালো লাগে, পেয়ে আবার হারাতেও। 

একটি পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টি দূষণ

“পরবর্তী স্টেশন নেতাজী। প্লাটফর্ম ডানদিকে”
"The next station is Netaji. Platform is on right side". 

তখনও ট্রেন ঢোকেনি। আমার চোখ আটকে লাইনের প্রচণ্ড বিদ্যুৎ পরিবাহী শোয়ানো বিমগুলোর দিকে। বাতানুকূল মেট্রোর বড় জানলার বাইরে থেকে পরিপাটি সফিসটিকেটেড মানুষগুলোকে দেখতে বেশ ভালো লাগে। দরজা খুলতেই ভেতর থেকে বেশ কয়েকজন নেমে এলেন। মুখোমুখি হয়েও ধাক্কা লাগলো না। আর নিয়মমাফিক ভেতরে ঢোকার আগে দরজার চ্যানেল বরাবর পা টা ফেলে দিলাম যাতে দরজা বন্ধ হতে কিছুক্ষন সময় নেয়। এটা আমার বহুদিনের অভ্যাস। এরকম করে বহুদিন বহু মানুষকে সাহায্য করেছি। আজও তাই হল। বুঝলাম পেছন থেকে কে ছুটে এসে অবশেষে ধরতে পেরেছে। মুহূর্তের মধ্যে দরজাটা দুপাশ থেকে বন্ধ হল। একটা দামাল নিঃশ্বাস ক্লান্ত স্বরে। শুধু একটা কথাই কানে গেল। “থ্যাংকস”।

মাঝে চলে গেছে একটা ষ্টেশন, খেয়াল পড়েনি।

“পরবর্তী ষ্টেশন যতিন দাস পার্ক। প্ল্যাটফর্ম বাদিকে। The next station is Jatin Das ParkPlatform is on left side".

দরজার ঈষৎ কালো কাচে প্রতিবিম্ব দেখলাম আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির, যে কিছুক্ষণ আগে থ্যাংকস বলল। লাল রঙের ওপর সবুজ রঙ্গের গোল প্রিন্টার সালোয়ার। খোলা ছুল, চোখে কাজল, গায়ে শহুরে পার্লারের আভিজাত্য আর ঠোঁটে গ্লসি লিপস্টিক এর আবরণ। হাতে রঙ্গিন কাঠের চুরির শেষ এবং শুরুটা কালো।

আমার এক কাঁধে ল্যাপটপের ব্যাগ টা আর অন্য কাঁধে এই অপরূপাকে জায়গা করে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব।
যতবার কাচের দিকে তাকাই ততবার চোখে চোখ পড়ে। ততবারই মাথা নিচু। আমার মেসেজ টোন বেজে ওঠে - “আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে”

আর যতবার ই আমার মেসেজ টোন বেজে ওঠে ততবার মুখে এক অদ্ভুত বিরক্তি প্রকাশ পায় তার। আমি জায়গা করে দেই ভেতরে প্রবেশের। ঠিক বা হাতেই শারীরিক প্রতিবন্ধীর সিট। মেয়েটি বসলো না। পেছন থেকে এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। আমার চারপাশটা তখন বিদেশী পারফিউমের গন্ধে মোঃ মোঃ।  গোলাপের পাপড়ি মুঠো করে ছিঁড়ে দু হাতের মুঠো তে ঘষলে যে বন্য গন্ধে চারিদিক ভাসে মেয়েটির গায়েও সেই গন্ধ। আমার বাঁ হাত টা পকেটে আর ডান হাতে ব্যাগটা নামিয়ে পায়ের মাঝে রেখে দাঁড়ালাম। তখন সবে নেতাজী ভবন। জলন্ধরে হঠাৎ পায়ে ক্রাম্প হয়েছিল। তাই আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। একটু বসতে ইচ্ছা করছিল। ভাবতে না ভাবতেই একজন উঠে গেলেন। আমার পাশে দাঁড়িয়ে সেই মেয়েটি।

মাথা ঝুকিয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি ব্যাগটা এক হাতে চেপে ধরে তার দিকে তাকালাম এবং খোলা হাতে “আপ কে লিয়ে” ভঙ্গিতে সিট টা ছেড়ে দিলাম। মেয়েটি বসার আগে এক ঝলক তাকালো, হাসলোআর কিছুক্ষণ যেতেই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আরও একটু পরিপাটি করে নিল। আমার চোখ বাইরে স্থির। অন্যদিকে মেট্রো গতি নিয়ে ছুটে চলে আপন খেয়ালে। কিছুক্ষণ পর এক ঝলক নামিয়ে দেখি বুকের ওড়নাটা উঠে এসেছে অনেক উপরে। তেরচা গলার সালোয়ারে ঈষৎ বুকের পাতায় যেন এক স্নিগ্ধ জলপ্রপাত। এত দামী সালোয়ার পিস এর অর্ডারে দর্জির যত রাগ যেন বুকের কাটিং এ। যথারীতি একটু ঝুকে বসলে যা হয়। আমি বাধ্য হয়েই বললাম “হেলান দিয়ে বসলে ভালো হয়না”। মেয়েটি বুঝতে পেরে মাথা নিচু করলো, খোলা চুলে চাপা দিল পুরুষের যাবতীয় দর্শন। রক্ষা পেল আরও এক নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টি দূষণ। 

বন্ধুত্ব

সে পথ আর পা মিলিয়ে হাঁটে না এক পথে।
সে মুহূর্ত আজ ধরা দেয় না সময় কে বস মেনে।
কর্মসূত্রে দূরত্ব বাড়েনা, বাড়ে কর্মযজ্ঞের মনোমালিন্যে।
সে মানুষগুলোও আজ হাসে না মুখোশের আড়ালে।
দূরত্ব বাড়লে শুধু সম্পর্ক নয়
নিজের ছায়াকেও প্রকাণ্ড মনে হয় আয়নায় দাঁড়ালে।

একটি মধ্যরাতের ইতিবৃত

একটি নির্জন ঘরের মধ্যে, বিছানায় বসে,
ল্যাপটপে আমি চলচ্চিত্র দেখি, মধ্যরাতে
চলচিত্রের রোমান্টিক গানের মতো রাত্রিটা
বয়ে যাচ্ছে চৈত্রের বুকের ওপর দিয়ে
ধু ধু বাতাস যেন খেই হারিয়ে বসে আছে
দূরমাঠে কোনও এক বটগাছের শেকড়ের ঝুড়িতে
একটি অর্ধবৃত্তাকার জ্যামিতি নির্বোধের মতো
তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে
কোনও ষোল বয়সী রূপসীর
আত্মবিশ্বাসহীন হাসির মতো
ছবির বিষণ্ণ লিরিক্সগুলো
এ ওর গায়ে ঠোকাঠুকি করতে করতে
পায়চারি করছে নিঃস্ব বারান্দায়
বখাটে জ্যোৎস্নার এই উন্মাদ  রাতে
জিরো পাওয়ারের বাল্বগুলিরও আজ ছুটি
ভূমধ্যসাগর থেকে ভেসে আসা স্ফীত ঢেউগুলি
উড়ছে মেঘের ওপর দিয়ে;
আর মেঘ ঝুঁকে পড়ছে
কোথাও জল ছুঁই ছুঁই, ঝিলের দিকে
ক্ষুধার্ত পেটের মধ্যে হঠাৎ মুচড়ে-ওঠা একটা দহন
অপহৃত নাবালক আর কিছু পরকীয়া বন্ধুত্বপ্রবণ
বেঁধে নেয় অন্য এক চিন্তাসংকলন।
অনায়াসে বহু হৃদয়ের সাথে গড়ে তোলা যুক্তরাজ্যগুলি;
পৃষ্ঠা খোলে আমার সংশয়-রচিত দৃশ্যপাঠে
দূর থেকে দেখা যায় তোমার উড়ন্ত চুল
অবাধ্য হতে হতেই আবার পোষ মেনে যাচ্ছে
তোমার নিঃসঙ্গ হৃদয়ের মধ্যে 
দুপুরের সেই নির্ঘুম শান্ত অজগরটি শুয়ে আছে;
যার হঠাত জেগে ওঠা  নিঃশ্বাস,
আমাকে উড়িয়ে নেয় সেই আকাশের বুকে
যেখানে পাখিরা, ঐ সাদাকালো চলচিত্রটির মতো
ক্লান্তিহীন উড়ছে, উড়ছে,আর উড়ছে 

“আজি গোধূলিলগনে এই বাদলগগনে তার চরণধ্বনি আমি হৃদয়ে গণি - সে আসিবে আমার মন বলে সারাবেলা”

রোজ বিকেলে আমার বারান্দার সামনে একটা পাখি এসে বসে। একই পাখি যে রোজ বসে তা বলতে পারছিনা। কিন্তু ওই ডানার কাছটা, প্রতিদিনই একটু ছেঁড়া লাগে। সারাদিনের উড়ে চলার ক্লান্তিটুকুকে রেখে বাসায় ফেরার জন্য গোধুলিবেলায় এই থমকে যাওয়া টুকু। আমি এখন যে বাড়ীতে থাকি তার তিনতলার বারান্দা থেকে আকাশটাকে অনেকটা কাছে মনে হয়। কখনো তার নিশ্ছিদ্র কালোর মাঝে ওই নক্ষত্র মন্ডলের বিশাল নীরব ভয়াভয় মুদ্রায় কালপুরুষ, আবার কখনো গোধূলিবেলার রঙের মায়া। ওই যে লুব্ধক, আর্দ্রা, ওই যে আর একটু উত্তরে ক্রতু, পুলহ, পুলস্ত্য সপ্তর্ষির দল এক বিরাট প্রশ্ন চিহ্নে বেঁধে রেখেছে এই মহাজগতের রহস্যটুকু। সহস্র আলোকবর্ষের পথ ধরে বয়ে আসা সব অতীতের ছবি।

ধোঁয়াশায় ঢেকে থাকা এক আকাশ কালো মেঘ অনেকক্ষণের অপেক্ষার পর উজাড় করে দিল নিজেকে। এমনই এক না বিকেল না সন্ধ্যে হওয়া এক হলুদ রঙ গোধুলির। এক পশলার পরে মাটির সোঁদা গন্ধ পৌঁছে যায় এই বারান্দাতেও। পাশের ঘরের মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে বারান্দার এক কোণে। ওই রাতের কালপুরুষের মত নীরব ছায়া হয়ে থাকা ছাড়া, বিকেলটুকু পেরিয়ে গিয়ে কিই বা করার থাকে তার। প্রত্যেক বিকেলেই তার চুপচাপ বসে থাকা দেখি। ঘরে চালিয়ে রাখা টিভি আর তার নীরব চোখের ভাষাহীনতায় প্রশ্রয় পেয়ে বেজে চলেছে রাজ্যের খবর, দেশের খবর, তেলের দাম, ডলারের দাম।

কদিন আগেই দেখেছিলাম কিম-কি ডুকের স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার এন্ড স্প্রিং। কিমের প্রথম ছবি, আমার দেখা। কি অসামান্য ক্ষমতায় এক বৌদ্ধ জীবনের সাথে মিলে গেছে ঋতু গুলি। গোধূলি তো এমন কতই আসে, কতই যায় - প্রতিদিনের ঐ ডানাছেঁড়া পাখির মত। কিন্তু এক একটা বেলা মনের মধ্যে থেকে যায়।

হটাৎ প্রশ্ন জাগে, এই গোধূলি কি? প্রতিদিনের বিকেল আর সন্ধ্যাটুকুর এই নিয়মিত ফাঁকটুকুই কি শুধু? এক অনন্ত গতিময়তায় নিয়মিত ভাবে দিনের আসা, দিনের যাওয়ার মাঝের ওই থমকে দাঁড়ানোটাই বা রোজ এমনি আসে কেন? কেনই বা কনে দেখা রোদের রঙ দিয়ে জন্ম দিয়ে যায় এমন এক একটা আশ্চর্য গোধূলিবেলার? সূর্যের অপসারণের সাথে আঁধারের আগমনটুকু কেবল প্রাকৃতিক ঘটনা। এরসাথে হৃদয়ের এক সার্থক আলিঙ্গণে এক এক গোধূলি জন্ম নেয়, মনের ভিতরে বসে বলে যায় কত কথা।

শেষ প্রহরে আমার লেখা একটা তার ছেঁড়া কবিতা দিয়ে পোস্টটির ইতি টানছি।

তুমি আমার গোধূলি বেলা, বৃষ্টি ভেজা কাক
সন্ধ্যে হলেই ভেস্তে যাও, রাত্রি বলে থাক।
গভীর রাতে নিয়ন আলো, ঝিলের ধারে কই,
সন্ধ্যে আলো বর্ষা ভালো তোমার সাথে সই।
রাত-বিরেতে বৃষ্টি বাদল, কফির কাপে সুখ,
মেঘের পরে মেঘবালিকা, ঠোঁটের পরে মুখ।

আবির দাদার জন্মদিনে কবিতাটা আবিরদাদার জন্য

আজ উঁকি মেরে দেখছে সাগর নীল আকাশ
পরক্ষনেই চুরি যায় দা ভিঞ্চির ক্যানভাস
ল্যাদ ল্যাদ আর ল্যাদ কুঁড়ে খায় বারোমাস
ফাঁক পেলে খুঁজে নেয় ছুটির অবকাশ

শীতকালে শীতঘুম দুপুর হয় প্রাতরাশ
ঠোঁটে চুমু নেই, আছে নিকোটিন আর ছাইপাঁশ।
সময়ের স্রোতে ধুলো পরা ভালোলাগা একরাশ
হৃৎস্পন্দনে ক্লোরোফিল, জমা হয় দীর্ঘশ্বাস।   

মাসিমা (সিরিজ ৩) - শুভদ্বীপ দেব কে উৎসর্গ করে

মাসিমা প্লীজ ভুল বুঝবেন না
ধর্মতলার মোড়ে ওভাবে ডিম পারবেন না।

মাসিমা শুভ আর আগের মত নয়
কনভারসের ফিতে আলগা দিয়ে সিকিউলার হয় হঠাৎ
কবিতার প্রতি স্তবকে তার বন্দী হয় কিছু অনুভব
আবার কখনো প্রিয়তমাকে ভালোবেসে
ঠুনকো স্যানিটারি গিফটে হলুদ নিওস্প্রিণ্ট লাগায় লজ্জায়।

মাসিমা ভুল বুঝলেন?
শুভর প্রতিটা দিন কাটে ভালোবেসে
ঝুলে থাকা কালপুরুষের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
অন্ধ অক্ষম চোখের কালো চশমায় গ্রাস করে নিজের পৃথিবী
শুভর মাথায় ঘোরে কিছু অবান্তর বাস্তব
E= MC²  বা অংকের ইন্টিগ্রেশন ডেরিভেটিভ গুলো মাথায় না ঢুকলেও
শুভ কিন্তু ভালো কবিতা লেখে।   

আয় বৃষ্টি ঝেপে

অফিস থেকে ঘরে ফেরার পথে
উঠে পড়ি জলন্ধর লোকালে।
গাদাগাদির সৌজন্যে ভেতরে ঢোকার সৌভাগ্য করে দেয়নি কেউ।
না কোনও মানুষ, না কোনও মাতাল।
দরজার পাশে বঞ্চিত সরীসৃপের মত এগিয়ে গেলাম।
একটু জায়গা, একটু জায়গার বড় আকাল।
একটার পর একটা স্টেশন গেল।
নিজের নিঃশ্বাস কে আরও তীব্র মনে হল।
নিজেরটা তীব্র অসন্তোষ মেনে নিলেও
আর যেগুলো ভেসে আসছে প্রত্যেকটার অন্যরকম বহর।
আমি না পারলেও কখনো কখনো ঢুকে যায় কিছু অক্ষর।
খেয়াল করিনি ডান পায়ের গোড়ালি বেশ খানিকটা ছুলে গেছে।
চলন্ত ট্রেন এর হাতলে ছুঁয়ে গেছে দুটো ভিন্ন লিঙ্গের হাত।
কিশোরীর চোখ তখন আটকে গেছে
এক শহুরে বাউলের চোখে।
বৃষ্টির ছাট এসে বার বার ভিজিয়ে দিচ্ছে
কিশোরের বুকের অপরিণত সরলরেখাকে।
কিশোরী চোখের ভাষায় বলছে,
আর মাত্র দুটো স্টেশন, আমি কি একটু অবাধ্য হতে পারি?”
বৃষ্টি থামলে কি হবে, বাউলের পা জড়িয়ে আসছে,

মন চাইছে আয় বৃষ্টি ঝেপে।

ইতিহাস সাক্ষী বিপন্ন পুরুষের

প্রতিনিয়ত যে মানুষ খুঁড়ছে নিজেকে অবিরত, তার সাথে ইতিহাস সরীসৃপদের মিল যেমন আছে, অমিল ও ততোধিক। যেমন শেক্সপিয়ার এর প্রতিটি নায়ক চরিত্র সদর্পে বীর, সঙ্গে প্রত্যেকেই এক বিপন্ন পুরুষের দৃষ্টান্ত। চরিত্রগুলো বেরঙ্গিন নয়, তবু Catastrophe তে গিয়ে bluntজানিনা সেটা শেক্সপিয়ার এর বক্তব্য প্রকাশের অক্ষমতা না lack of university education. অথচ ইতিহাস সাক্ষী সেই চওড়া বুকের নায়কেরাই নিজেকে, নিজের ক্ষমতাকে সপে দিয়েছে পরিস্থিতির নির্বিকার, নিরবিপাক বেদিমূলে। Macbeth, Julius Ceaser, Edward কেউ ই বাদ পড়েনি।