আমার একটা খাতা ছিল। তার নাম দিয়েছিলাম ‘পাতার খাতা’। দিয়েছিলাম বললে ভুল হবে, বাবা দিয়েছিল। পুরানো সব এটা ওটা থেকে সাদা কাগজ নিয়ে নিয়ে
একসাথে সেলাই করা। সপ্তাহ, মাস বা বছরের ওইসব লাল রঙের দিনগুলোতে যখন বিকেলবেলা বাবার
হাত ধরে ছুট লাগাতাম এদিক-ওদিক, তখন বাবা চিনিয়ে দিত। এটা অশ্বত্থ,
ওটা বট, এটা শেয়ালকাঁটা, ওটা শিরীষ। মাঠের ধারে ঘাসের আনাচে কানাচে হয়ে থাকতো আমরুলি
পাতার দল। রিমি দিদিকে দেখতাম ওই পাতাগুলো দিয়ে খেলনাবাটি সংসারের লুচি তৈরী করত।
রিমিদিদি লুচি পাতাই বলতো। আমিও ওর খেলনা বাড়ির অতিথি হয়ে নিমন্ত্রণ খেয়েছিলাম
কয়েকবার। তাই আমিও জানতাম ওগুলো ‘লুচি পাতা’।
একটা বাঁশঝাড় ছিল বাড়ির পাশে। সেটা এখনও আছে। মা বলতো ওখানে
নাকি শেয়াল থাকে। সেই অজানা জাতের কোন এক ভয়ঙ্কর শেয়ালের ভয়ে কোনোদিন পা দিতে সাহস
করিনি। বাবা ওখান থেকে একটা বাঁশ পাতা নিয়ে এসেছিল। বাবা সৌভাগ্য বশতঃ ওই দানবিক
শেয়ালের দর্শন লাভ করেনি। সেই চিনেছিলাম বাঁশপাতার গায়ে লম্বা লম্বা দাগ কাটা।
অনেকটা তেজপাতার মত। আমার খাতায় জমে গেছিল অনেক পাতা। বাড়ি এসে ছুটি মায়ের কাছে।
সমস্ত বিকেলটা জুড়ে আগান-বাগান হেঁটে যে কটা পাতা তুলে এনেছি,
সেসব ঢেলে দেওয়া। তারপর সমস্ত মণি-মাণিক্য নিয়ে সাজাতে বসি
খাতার পাতায়। না-জানা পাতার পাশে লাগে পরিচয়ের ছোঁয়া। আমার পাতার খাতায় ঝেঁপে এসে
বসে এক আকাশ সন্ধ্যে বেলা, জ্বলজ্বল করা সব নক্ষত্রের দল নিয়ে।
No comments: