যারা এখনো শুধুই বন্ধু, বন্ধুর চেয়ে বেশী হয়েও অন্ধ, কিংবা জানালার একটা পাল্লা বন্ধ, একটু ভাল আর একটু মন্দ

তাদের জন্যেই কিছু এবড়ো খেবড়ো ছন্দ, তাদের জন্য কবিতা-গল্প, অল্প স্বল্প প্রেম, আড্ডা, হঠাৎ মেঘ এবং বৃষ্টি।

শৈশবের স্মৃতি থেকেঃ ৯

ক্লাশ নাইন। নতুন নতুন টিউশন। এক ঝাঁক নতুন মেয়ে।  তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাইমারি স্কুলে পড়তো একসাথে। কিন্তু তখনও মেয়েদের নারীত্ব নামক অমোঘ জিনিসটি সম্পর্কে সচেতন হইনি। ক্লাশের বন্ধুদের সাথে নানারকম তাত্ত্বিক আলোচনা চলতো। কিন্তু তাদেরকে একসাথে পেয়ে সবকিছু গুলিয়ে গেল। বন্ধুদের কাছ থেকে শচীনের বাউন্ডারি মারার মত ধপাধপ প্রেমে পড়ার গল্প শুনতাম  অফ্‌-পিরিয়ডে। উফ্‌, সে কি লোমহর্ষক কাহিনী সব নিয়ে আসতো একেক জন। সে কি রহস্যময়তা। বিশেষ কোন মেয়ে আজ তাকিয়ে হেসেছে। ব্যাস্‌, স্বপ্ন দেখা শুরু। কেউ একজন নোটস্‌ চেয়েছে। পরের দিন স্কুলের হেডলাইন।

বন্ধুদের আড্ডায় আমি প্রায়ই এই প্রশ্ন শুনতে পেতাম যে জীবনে কটা প্রেম করেছিস? একটু হেসে উত্তর দিতাম, অসংখ্য। হাসির মানেটা সবার কাছে নানাভাবে পৌঁছায়। কেউ ভাবে সলজ্জ, কেউ ভাবে নির্লজ্জ। কিন্তু আসল ব্যাপারটা কেউ বোঝে না। হাসি পায় এটা ভেবে যে, ‘প্রেমকিভাবে করে? এটা কি সকালের প্রাতঃকৃত্যের মত কিছু? নাকি বাজারের দরদাম করার মত? কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস। কেউ বা বলে অভ্যাস।

নবনীতা দেবসেনের একটা লেখা পড়েছিলাম প্রেম নিয়ে। দশ কথার পর এক কথায় বলে দিল, এ শুধু মেঘের খেলা। মেঘের খেলা কি একরকম হয়? কতরকম মেঘ, তার কতরকম খেলা। এর মানে কি বুঝব? তাই নবনীতাকে হাতে রেখে আর একটু আঁটঘাঁট বেঁধে বেরলাম প্রেম খুঁজতে। যাকে পাই জিগ্যেস করতাম মানে যাদের জিগ্যেস করতে লজ্জা লাগেনা আর কিউত্তরের তালিকা দেখলে চিত্রগুপ্ত তার ফর্দ বের করতে লজ্জা পাবেন। এক দাদা বলল, দেখিস না, তোদের বয়সী ছেলে মেয়ে গুলো পার্কে বসে ছাতার তলায় যা করে, তাই হল প্রেম করা। কোনো বন্ধু বলল, ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড ইয়ার। আবার এক বান্ধবী তো এমন প্রশ্ন শুনে ভাবল আমি বুঝি তার প্রেমেই পড়ে গেলাম। মেসেজের উত্তর দেয়না আর। এক বান্ধবী বলল, তার ছয় বছরের প্রেম জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যে, প্রেম করা একটা অভ্যাস। রোজকার কাজকর্মের সাথে যার মিলে যাওয়া। যার ওঠা পড়া গুলো সময়ের সাথে থাকে, কিন্তু অ্যাটিনুয়েটেড হয়ে যায়, তবে মিলায় না কখনও।


স্কুলে থাকার সময় প্রেমের এই সরল রূপটা দিব্যি ছিল। বড় হয়েই বিপত্তি। সুকুমার রায় বলেছেন, বড় হলেই মানুষ গুলো সহজ জিনিসেরও মানে খুঁজতে চায় সবসময়। প্রেম করার আবার মানে কি? আর থাকলেও বা, জানার দরকার কি? জানলে কি চতুর্বর্গ লাভ হবে? মসফেটে কি দু অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট বেশি যাবে, নাকি ভারতের জিডিপি বাড়বে

No comments: