যারা এখনো শুধুই বন্ধু, বন্ধুর চেয়ে বেশী হয়েও অন্ধ, কিংবা জানালার একটা পাল্লা বন্ধ, একটু ভাল আর একটু মন্দ

তাদের জন্যেই কিছু এবড়ো খেবড়ো ছন্দ, তাদের জন্য কবিতা-গল্প, অল্প স্বল্প প্রেম, আড্ডা, হঠাৎ মেঘ এবং বৃষ্টি।

দিল্লি কড়চা

দিল্লি এয়ারপোর্টঃ
সময়ঃ ভোর ৬ টা
আজ অনেকদিন পর দিল্লিতে এলাম । সঙ্গে তিতলি । তিতলিকে ছাড়তে আমাকে এয়ারপোর্ট আসতেই হল । তিতলি পূজায় বাড়ি যাবে । প্লেনের ভেতরে জানলার পাশে বসে হয়তো প্রাণ ভরে দেখে নিচ্ছে কোলকাতার পথ-ঘাট, হাওড়ার ব্রীজ, তার তলার কালচে রূপোলি সুতোর মতো পড়ে থাকা গঙ্গা কিম্বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালদুএকটা ভোরের বিমান উড়ে যায় । মুম্বাই, চেন্নাই কিংবা কলকাতা যাবে হয়তো । কোলকাতার রাস্তায় থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষের উনুনের ধোঁয়ায় আস্তে আস্তে শহর ঢেকে যাবে এরপর । তখন ভিক্টোরিয়া, হাওড়া ব্রীজ, এমনকি গঙ্গাকেও খুব অস্পষ্ট লাগবে । নিচে শুধু থাকবে একটা ধোঁয়ার স্তর, উপরে মেঘের বুক চিরে উড়ে চলা শুধু ।


দিল্লি সেন্ট্রালঃ
সময়ঃ দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট
তিতলি এতক্ষণে পৌঁছে গেছে বাড়ি । ভোর বেলায় বাসের জানলা দিয়ে দূরে ধোঁয়াশায় ঢেকে থাকা লোটাস টেম্পলটা স্পষ্ট হতেই মনটা ভালো হয়ে গেল । আবার দিল্লি । প্রায় চারমাস পর । সেই ধোঁয়া ধুলো, মানুষের ভীড়ে ভরা দিল্লি । দিল্লি এখন জাগছে । রেল স্টেশনের কুলিদের ঠেলাঠেলি, দর কষাকষি পার হয়ে একটা ট্যাক্সির মধ্যে গা এলিয়ে চোখে পড়ল সেই কুতুবমিনার । লোকের ভীড়, জীবিকা বা জীবনের তাড়নায় আধডোবা সূর্যকে পাশে রেখে মানুষের জেগে ওঠা । বড় বড় লঙ্কা, আলুর ঢিপি বানিয়ে তৈরী হওয়া আমাদের চাহিদার জন্য । পিঠে পঞ্চাশ কিলো আলুর বস্তা নিয়ে ভারে বেঁকে পড়া মানুষগুলো ছুটে বেড়ায় জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, জীবিকার জন্য । জীবন জেগে ওঠে । চারিদিকে থিতিয়ে পড়া ধুলো, ধোঁয়া আবার ভেসে ওঠে হাওয়ায় । পায়ের তলায় থেঁতলে যাওয়া সব্জির গন্ধে ভরে ওঠে মহত্মা গান্ধী রোড । দুকাঁধে বাঁক ঝুলিয়ে চলে যায় ভারির দল । চুঁইয়ে পড়া জলের রেখায় চেনা হয়ে যায় তাদের রাস্তাগুলো


দিল্লি-জলন্ধর জি. টি. রোডঃ
সময়ঃ পরদিন সকাল ৬ টা
রাস্তার ধারের ঘুমন্ত ট্রাকগুলোকে দেখে কেমন কষ্ট লাগে । মনখারাপ লাগে । একটু পরেই ইঞ্জিন গর্জে উঠবে । পিঠে টন টন জিনিস নিয়ে চলা শুরু । দেশের এপ্রান্ত থেকে ওই প্রান্তের দিকে । মাঝে কোথাও ধরা পড়া ওভারওয়েটের জন্য । এই ভাবে চলতে থাকা, মাঝে মাঝে থেমে পড়া, আবার চলা । গ্রাম, শহর পার হয়ে চলে যাওয়া কোন দূরের দিকে, যেখানে সূর্য ওঠে অথবা সূর্য ডুবে যায় চলতে থাকা ট্যাক্সিতে পিছনে ফেলে আসি আধ জাগা, জাগতে থাকা দিল্লির এটা-ওটা । এগিয়ে চলি চলতে থাকা জি.টি. রোডের দিকে । ওঠা পড়া, ঘুম জাগার ঢেউ ঠেলে চলা । কোথাও বেজে ওঠে কোন মেয়ের সকালের রেওয়াজ । প্রেশার কুকারের সিটি, রাস্তার ধারে কোনও ঢাবায় কড়াইএ তেলের শব্দ । প্রিলিউড ছেড়ে জাগে জীবন । ফিরে আসি আবার জলন্ধরে। 

No comments: