রোজ বিকেলে আমার বারান্দার সামনে একটা পাখি এসে বসে। একই পাখি যে রোজ বসে তা
বলতে পারছিনা। কিন্তু ওই ডানার কাছটা, প্রতিদিনই একটু ছেঁড়া লাগে। সারাদিনের উড়ে চলার
ক্লান্তিটুকুকে রেখে বাসায় ফেরার জন্য গোধুলিবেলায় এই থমকে যাওয়া টুকু। আমি এখন
যে বাড়ীতে থাকি তার তিনতলার বারান্দা থেকে আকাশটাকে অনেকটা কাছে মনে হয়। কখনো তার নিশ্ছিদ্র কালোর মাঝে ওই নক্ষত্র মন্ডলের বিশাল
নীরব ভয়াভয় মুদ্রায় কালপুরুষ, আবার কখনো গোধূলিবেলার রঙের মায়া। ওই যে লুব্ধক,
আর্দ্রা, ওই যে আর একটু উত্তরে ক্রতু, পুলহ, পুলস্ত্য – সপ্তর্ষির দল এক বিরাট প্রশ্ন চিহ্নে বেঁধে রেখেছে এই
মহাজগতের রহস্যটুকু। সহস্র আলোকবর্ষের পথ ধরে বয়ে আসা সব অতীতের ছবি।
ধোঁয়াশায় ঢেকে থাকা এক আকাশ কালো মেঘ অনেকক্ষণের অপেক্ষার পর উজাড় করে দিল নিজেকে। এমনই
এক না বিকেল না সন্ধ্যে হওয়া এক হলুদ রঙ গোধুলির। এক পশলার পরে মাটির সোঁদা গন্ধ
পৌঁছে যায় এই বারান্দাতেও। পাশের ঘরের মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে বারান্দার এক কোণে।
ওই রাতের কালপুরুষের মত নীরব ছায়া হয়ে থাকা ছাড়া, বিকেলটুকু পেরিয়ে গিয়ে কিই বা করার থাকে তার। প্রত্যেক
বিকেলেই তার চুপচাপ বসে থাকা দেখি। ঘরে চালিয়ে রাখা টিভি আর তার নীরব চোখের
ভাষাহীনতায় প্রশ্রয় পেয়ে বেজে চলেছে রাজ্যের খবর, দেশের খবর, তেলের দাম, ডলারের দাম।
কদিন আগেই দেখেছিলাম কিম-কি ডুকের ‘স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার এন্ড
স্প্রিং’। কিমের প্রথম ছবি, আমার দেখা। কি অসামান্য ক্ষমতায় এক বৌদ্ধ জীবনের সাথে মিলে
গেছে ঋতু গুলি। গোধূলি তো এমন কতই আসে, কতই যায় - প্রতিদিনের ঐ ডানাছেঁড়া পাখির মত। কিন্তু এক
একটা বেলা মনের মধ্যে থেকে যায়।
হটাৎ প্রশ্ন জাগে, এই গোধূলি কি? প্রতিদিনের বিকেল আর সন্ধ্যাটুকুর এই নিয়মিত ফাঁকটুকুই কি
শুধু?
এক অনন্ত গতিময়তায় নিয়মিত ভাবে দিনের আসা,
দিনের যাওয়ার মাঝের ওই থমকে দাঁড়ানোটাই বা রোজ এমনি আসে
কেন?
কেনই বা কনে দেখা রোদের রঙ দিয়ে জন্ম দিয়ে যায় এমন এক
একটা আশ্চর্য গোধূলিবেলার? সূর্যের অপসারণের সাথে আঁধারের আগমনটুকু কেবল প্রাকৃতিক
ঘটনা। এরসাথে হৃদয়ের এক সার্থক আলিঙ্গণে এক এক গোধূলি জন্ম নেয়,
মনের ভিতরে বসে বলে যায় কত কথা।
শেষ প্রহরে আমার লেখা একটা তার ছেঁড়া কবিতা দিয়ে পোস্টটির ইতি টানছি।
তুমি আমার গোধূলি বেলা, বৃষ্টি ভেজা কাক
সন্ধ্যে হলেই ভেস্তে যাও, রাত্রি বলে থাক।
গভীর রাতে নিয়ন আলো, ঝিলের ধারে কই,
সন্ধ্যে আলো বর্ষা ভালো তোমার সাথে সই।
রাত-বিরেতে বৃষ্টি বাদল, কফির কাপে সুখ,
মেঘের পরে মেঘবালিকা, ঠোঁটের পরে মুখ।