যারা এখনো শুধুই বন্ধু, বন্ধুর চেয়ে বেশী হয়েও অন্ধ, কিংবা জানালার একটা পাল্লা বন্ধ, একটু ভাল আর একটু মন্দ

তাদের জন্যেই কিছু এবড়ো খেবড়ো ছন্দ, তাদের জন্য কবিতা-গল্প, অল্প স্বল্প প্রেম, আড্ডা, হঠাৎ মেঘ এবং বৃষ্টি।

একটি বেনামী চিঠি

ছোটবেলার মত করে বলতে গেলে, “পত্রের প্রথমে তুমি আমার ভালবাসা নেবে, ছোটদের আমার আন্তরিক ভালবাসা এবং বড়দের আমার সস্রদ্ধ প্রণাম জানাবে। তুমি কেমন আছো? আমি ভালো আছি। পরীক্ষা শেষ হল আমার সবেমাত্র। তোমাদের কি খবর? তুতাই আর ভুন্নু কেমন আছে? মেজ মামিমার পোষা বাছুরটা কত বড় হল, ইত্যাদি ইত্যাদি।”

ব্যস্ এই হল গল্প। আরও কয়েকটা লাইন চলতো গল্প। তারপর শেষ হয়ে যেতো। অনেকটা এইভাবে- “সবাই ভালো থাকবে। ইতি তোমাদের” তারপর নিজের নাম।

বয়সটা আর চার এ আটকে নেই, চৌদ্দতেও নেই, বয়স এখন চব্বিশে এসে ঠেকেছে। আর অনুভূতি গুলো সেইরকমভাবে বদলে গেছে এবং তার সাথে আরও অনেক কিছু। জীবন, জীবনদর্শন, জীবনযাত্রা- সবকিছুতেই আমূল পরিবর্তন এসে গেছে। কিছুটা নিজে নিয়ে আসা, কিছুটা আমার উপর চাপিয়ে দেওয়া, কিছুটা পরিস্থিতির চাপে পড়ে মানিয়ে নিতেই বাধ্য হওয়া। আর অনেকটাই তোমার কাছ থেকে পাওয়া।

চার এর চিঠি, চৌদ্দ এর প্রেমপত্র, চব্বিশের বিরহগাথা, চৌত্রিশ এর বিবাহবাসর, চুয়াল্লিশের বিদেশভ্রমণ- সবই বোধহয় তোমাকেই লেখা। তোমাকে না লিখে আর কাকে লিখবো?

তুমিও “তুমি” ই আছো। আগে ছিলে “তুই”, এখন হয়েছ “তুমি”, ভবিষ্যতে হয়তো “আপনি” হয়ে যাবে। তখন এইরকমভাবে রবিবাসরীয় দুপুরে আমি তোমাকে আর চিঠি লিখতে বসবো না। ব্যাপারটা অধিকার চর্চার মধ্যে পড়ে যাবে।

সত্যি কথা বলতে গেলে, জলন্ধর আমার একেবারেই ভালো লাগছে না। এর থেকে কলকাতা অনেক ভালো ছিল। মানছি প্রচুর চাপ ছিল, এখনও আছে। কিন্তু ব্যাপারটা সেটা নয়। ওখানের লাইফ এ একটা অবসর ছিল, একটা ছন্দবদ্ধতা ছিল, একটা গতি ছিল, একটা নতুন রকমের ভালোলাগা। আর সবথেকে বড় কথা হল কলকাতায় মানুষের আপনত্ব ছিল যা আমাকে সবথেকে বেশী আকর্ষণ করেছিলো। আর সবথেকে বড় হল এখানের রুমমেট গুলো থেকে ওখানের রুমমেট গুলো অনেক better ছিল। সত্যি বলতে কোনও দ্বিধা নেই।

জলন্ধরের মধ্যে একটা কলকাতা কলকাতা ভাব থাকলেও তুমি জানো কলকাতা আমার কাছে কীরকম ছিল। কলকাতা যতদিন আমার জীবনে ছিল নেশা ছিল, শান্তি ছিল, কোনও চাওয়া পাওয়া ছিল না- একটা কীরকম চক্রের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম, যার থেকে বেরোনোর কোনও উপায় ছিল না- মানে উপায় ছিল না তা নয়, কিন্তু কোনও উপায় ই সেরকম স্মার্ট ছিল না।

কিন্তু তা সত্যেও কলকাতাকে আমি পছন্দ করি। কলকাতা তার নিজের দোষে ইতিবাচক হয়ে উঠেছিল আমার কাছে। পুরোটাই স্থান কাল পাত্র বা পাত্রীর এবং পরিস্থিতির ব্যপার। তাছাড়া কলকাতা আমাকে এমন কিছু দিয়েছে যেগুলো হয়তো অন্য কেউ দিতে পারতো না। সেগুলো কি তা তুমি ভালো করেই জানো, তাই আর লিখলাম না।

সত্যি বলছি মাসে এক হাজার টাকা বেশী খরচা হলে কিছু যায় আসে না, কিন্তু ছোটলোকামি আমি একদম সহ্য করতে পারিনা। এবং আমার ধারণা ইউনিভার্সিটি বাদ দিলে, পাঞ্জাব আমাকে ছোটলোকামি ছাড়া আর কিছুই দেয় নি। এটা যে কত বড় পাওনা সেটা তোমাকে বলে বোঝানো যাবেনা। পাঞ্জাবে পূজা বলে কিছু ছিল না আর নেই ও। থাকার কথাও ছিলনা। ২০১০ তে যা যা হয়েছিল ২০১১ তে তার সব উল্টোটাই হল। আশা করা যায় তাই হবে ২০১২ তেও।

এখন শুধু দরকার একজন কথা বলার সঙ্গী। সঙ্গিনীও বলতে পারো। আমার মেয়েদের সাথে কথা বলতেই আজকাল বেশী ভালো লাগে। যখন আমি তোমার সঙ্গে প্রচুর কথা বলতাম তখন ব্যপারটা নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। তুমি যখন ছিলে তারপরেও কথা বলার লোকের অভাব হয়নি। তুমি যখন থাকবে তখনও অসুবিধা হবেনা। আমার একজন শ্রোতা চাই। সেটা সবাই হতে পারে না।

যাই হোক প্রতিদিন দশ তলা ছাদে মেঝেতে শুয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি শুধু তোমাকেই মিস্ করি। বিশ্বাস কর একটুকুও বাড়িয়ে বলছি না। ডান পাশে কিংবা বাম পাশে, যায় আসে না। শুধু মিস্ করি। রোমান্স ব্যপারটার ছোঁয়া অনেকদিন হল পাই না। ঠিক প্রেম বলছি না, রোমান্স। লাস্ট পেয়েছিলাম কলকাতা ছাড়ার শেষ দিনে। কোনও অতীত ছাড়া, কোনও ভবিষ্যৎ ছাড়া, শুধু বর্তমান কে ঘিরে একটুকরো রোমান্স এর ছোঁয়া। ব্যস্ ঐ গল্পের এখানেই ইতি।

কেন যে সমস্ত গল্পের এইভাবেই ইতি হয় জানি না। কেন যে রাত্রি দিন হয়, কেন যে দিন রাত্রি হয়, আর কেন যে সব যাত্রা এত সহজে শেষ হয়ে যায়, জানি না। প্রতিবারের মত এবার আর বলব না যে জানতে চাই না। এবার আমি সত্যি সত্যি জানতে চাই। এবং আমি এটাও জানি তোমার কাছে এর উত্তর নেই। থাকলেও তুমি দেবে না।

এই দ্যাখো এতক্ষন শুধু নিজের কথাই বলে গেলাম। তোমার কথা কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। কেমন আছো? নিশ্চয়ই ভালো। একসময় যতটা ভালো ছিলে তার থেকে আশা করব অনেক বেশী ভালো আছো। এবং ভবিষ্যতেও যতটা ভালো থাকবে তার থেকেও অনেকটা ভালো আছো। ভালো থেকো আর আমার কথা চিন্তা করার দরকার নেই। আমি আজকাল রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনছি। একমাত্র রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলেই মনে হয় আমি তোমার সবথেকে কাছে আসি। তোমার এতটা কাছে মনে হয় কোনোদিন কারোর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। হয়তো বা অনেকেই গেছে।

আমি মোটেই ভালো নেই।

I miss you every moment, my everything. Especially, every night, when I lie down on the roof, when I look into the vastness of the sky, when I look into the stars, when I look into your eyes. I really miss you. I miss your presence, I miss your voice, I miss your mind, I miss your friendship  and I miss your love. I miss your life. I miss your everything.
And I miss you in my life.


ভালো থেকো। ভালবাসা নিও।

8 comments:

Arunima Ganguli said...

Ekta besh baro saro comment likhte cholechhi mone hochhe ... :P

Amra sobai kemon buriye gechhi na! 18 ar 25 er modhye 40ta bochhor to par kore felini. Tobu kothao jeno ekta bardhokyo neme esechhe..kobita likhte giyeo seta feel korechhi bohubaar....dead cellgulo thhik moto remove hoy na bhetor theke...srota nei...thhik e...bhasao thake na sab samay... blog, kobita eisob...definitely ekta rasta..(poth noy...)

Priyanka said...

Pujo ar kolkata niye amaro ektu likhe felte ichhe korchhe ....

Ebarer pujota satyi pujo(protibarer moto) chhilo na .. kimba khub beshi swatantro chhilo .. utsab chhilo na ... onyodin gulor motoi chhilo ekdom. Ektuo sajgoj na kora, aatpoure. Kintu tobuo kolkata chhilo janis...bhison bhabe chhilo ...maane utsab amake chhere chole gachhe thhik e..kintu kolkata chhere jayni...kolkata onek faka hoye gachhe amar kachhe..kintu onyo kothao thaka..bhetorer ei utsab heenota niye ..byaparta amay haunt kore...aami kauke miss korini... ebong ami hardly otit niye bhabi ...tobu obochetone hoyto obhab-bodh tuku achhe..jeta bhalo na thakake askara dey ... ar jototuku bhalo thaka..tar pechhone kolkatar onek prosroy..er beshi likhe ba bole bojhate paarbo na...taai katiye dei :D

Priyanka said...

Jaaihok, eto gulo kotha bole fellam karon ei lekhata amake diye boliye nilo :D

Tamoghno Mukherjee said...

Chithhi lekh. Publish na kor tobu lekh. Chithhir moto sundor byapar ar kota achhe :)

Kallyan Dutta said...

Ebar one liner er samay. Bere likhechho kaka. Chaliye jao. Asha rakhi tor "TUMI"r kachhe ei kathagulo pouchhe jak :)

Pallavi Bhattacharya said...

Lekha ta khub bhalo hoyechhe. Tomar present situation er sathe amar present situation er onek mil achhe. Kotha bolar lok nei. Tobe kotha bolar time je ogadh achhe, ta-o dabi korchhi na. Kotha bolar lok thakle kaj-er faak-e-o time baar kore newa jai.

Deep said...

একটা জিনিস আমি মানতে পারছিনা ১৮ আর ২৫ এর মধ্যে ৪০ বছরের পার্থক্য (অরুণিমাদির কমেন্ট); আমার কাছে এটা নয়। আমি আগের মতই আছি। কিন্তু হয়তো আমার চারপাশের পরিবেশ টা পাল্টে গেছে।

Pranob Mukherjee said...

You are growing up bro. Osadharon. We all miss u, ur presence, ur bawals. Keep writing. :)