ইস্কুলের চৌকাঠটা পেরিয়ে আমার কলেজের প্রথম দিন
ফেলে আসা অতীত আর হাজার স্বপ্ন রঙিন
সেই দিন ই বোঝা, কি কঠিন কি সোজা
ক্লাস মাঠ ল্যাব আর ক্যান্টিন আমার কলেজের দিন
এলিক্সারের সেই চূড়ান্ত সেন্টি গানটা এই লাস্ট সেমিস্টারে যে প্রায় বহুবার সেন্টি খাওয়াবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণটা সাড়ে তিনখানা বছর এবং বিগত সাড়ে তিন বছরের জন্যই এই আধা বছর অনেক Frustru আর সেন্টি হজম করতে হবে। হবেই। যাই হোক ফিরে দেখার সময় যখন, ছোট করে একটা ফ্ল্যাশব্যাক হয়ে যাক্।
২০০৬। কপালে ITME ই নাচছিল কে জানতো? জন্মে ভাবিনি হস্টেলে থাকবো। তার উপর আমি বিশ্ব বাওয়ালবাজ। বাড়ি ছেড়ে, উড়ুম্ভূম্ এবং বাকি বন্ধুদের ছেড়ে চলেই এলাম ITME এর হস্টেলে। অনেক বচকা বচকি, বালতি, সঙ্গে গভীর সতর্কবাণী (“কিছু হারাবেনা এবং কোনও ঝামেলায় জড়াবে না, মন দিয়ে পড়াশোনা করবে”) আরও অনেক প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক। মোটামুটি যেন সংসার করতে এলাম।
প্রথম- বলে তো জীবনের প্রথম হস্টেল। Basically, ওটা হস্টেল নয়। কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে একটা ফ্ল্যাট যেখানে ফার্স্ট ইয়ারদের মাথায় ছাদ provide করা হয়। সিনিয়র ছিল কয়েকজন। তারাও অল্প কদিনের মধ্যেই অন্য হস্টেলে (বড় হস্টেল বা ভীতিপ্রদ স্থান) চলে গেল।
যাই হোক, আমাদের ফ্ল্যাটে আমরা ৪ জন থাকতাম। আমার মত চরম বাওয়ালবাজ পাবলিকও জমিয়ে বন্ধুত্ব করে ফেললাম বাকি তিনজনের সাথে। মানে হয়ে গেল আর কি। ফার্স্ট ইয়ার হস্টেল মানে ছোটখাটো স্বর্গ। No senior, তার মধ্যে দশাসই হস্টেল সুপার। উফ্ যা চেহারা না। একদিন সেই হস্টেল সুপারকে আমি দোতালার ব্যালকনিতে উঠতে দেখেছিলাম। সিঁড়ি দিয়ে নয় ভাইলোগ দেওয়ালের গ্রিল বেয়ে। ঐ দৃশ্য দুর্বল হৃদয় মানুষের না দেখাই ভালো। যাই হোক চারিদিকে ধানক্ষেত, সামনে দুচার ঘর থেকে বস্তিই বলা যায়। একমাত্র ভরসা গেট এর বাইরে ফুচকাওয়ালা বা বৌদির দোকান। প্রচুর হাওয়া। খিদের চোটে মুড়ি খাওয়া অভ্যেস হয়ে গেল। আর হস্টেল এর খাওয়া? সে প্রসঙ্গে আসছি পরে।
ডায়মন্ড হারবার এ সবাই মিলে আড্ডা, রিভার সাইডে (হলদিয়াতে বেড়াতে যাওয়া), কখনও রুমমেটকে গান শোনানো (যখন তার মুড অফ থাকতো বা আমার), আর ভাটের গল্প, গল্প আর গল্প। কলেজে কি হচ্ছে, কার হৃদয়ে কার জন্য “চান্দ মেরা দিল চান্দনি হো তুম্ বাজছে, কে কতবার কোন সিনিয়রের কাছে চাট খেলো, কোন দাদা কলেজে কি নামে বিখ্যাত বা কুখ্যাত, ক্যাম্পাসের কোন এরিয়াতে চাট খাওয়ার সম্ভবনা বেশী, সতর্কতামূলক কর্মসূচি ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং অবশ্যই কিছু বিষাক্ত নেশা।
"হ্যাংওভার-হ্যালুসিনেশন"।
এবার আসছি হস্টেল এর খাওয়া দাওয়া প্রসঙ্গে। বাবা গো। মাছের ঝোল দেখলে মনে হয় বিবাগি ও সেই সঙ্গে একাহারি হয়ে যাই। মেনু বলতে ভাত (দু তিনটে কাঁকড়) আলুভাজা (মাঝে মাঝে মনে হতো ভাজা নয় স্যাঁকা), মাছের ঝোল (সেদ্ধ না হওয়া জলেই কিছু তেল আর জিরে-লঙ্কাগুড়ো ছড়িয়ে দেওয়া)। তরকারী??? ইয়াক্!!!!!! বেশীরভাগ দিন যদিও নন্ ভেজ ছিল। শুধু কাজের মধ্যে খাওয়ার মত ছিল দই আর মিষ্টি যা আমি খেতাম না। দুধ জাতীয় জিনিসের উপর আমার ছেলেবেলা থেকেই অরুচি ছিল। (ভবিষ্যতে জানিনা কি হবে বিশেষত বিয়ের পর) ব্রেকফাস্টে সেই জঘন্য লুচি। টিফিনে মাঝেমধ্যে চাউমিন্ টা ভালো পাওয়া যেতো। ফ্রাইড রাইস্ চিলি চিকেন চাটনি রসগোল্লা- সন্দেহ নেই। কিন্তু মুরগী গুলো হতো পলিয় মুরগী- No মাংস Only হাড়। আর রাইস্ টা উল্টোভাবে সেদ্ধভাত ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে ক্যান্টিন এর ছেলেরা খুব ভালো ছিল। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে ক্যান্টিনের ম্যানেজার- চোখে মুখে উল্টো লেভেলের বিরক্তি, এমন হাবভাব যেন তাকে চাষ করতে হয় আমাদের খাবার দেওয়ার জন্য।
হস্টেল এর কথা যখন বলছিই তখন ভূত এপিসোডটা বলতে হয়। তখন ৮টা ৩০-৯ টা। খেতে যাবার টাইম। হঠাৎ চ্যাঁচামেচির শব্দে ব্যালকনি (আমাদের ফ্ল্যাট তিনতলায় ছিল) থেকে উঁকি মেরে দেখি আমাদেরই এক বন্ধু হাফাচ্ছে। সবাই পড়িমরি ছুট লাগিয়ে নীচে গেলাম। গিয়ে যা শুনলাম তা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছিল না। শোনা গেল পাশের ফ্ল্যাটে ভূত দেখা গেছে। সব হস্টেলই ভূত নিয়ে একটা না একটা কাব্য হয়ে থাকে। ফাইনাল-ই আমাদের হস্টেলও। শোনা গেল কয়েকদিন আগেই কেউ ক্যান্টিন থেকে হস্টেলে ফেরার সময় ছায়া জাতীয় দেখেছিল। আরও বলে রাখি শোনা গেল আমাদের একবন্ধু নাকি কাঁটা হাত দেখতে পেয়েছিল। ভূত সদৃশ এবং আরও কিছু ঘটনা যেগুলো আগে থেকেই ঘটেছে যেমন একদম ভোরবেলায় হস্টেল এর গেট খোলার আগেই এক মহিলাকে দেখতে পাওয়া যায়, বা ফাঁকা ঘরে সিডি প্লেয়ার আপনা আপনি চলতে শুরু করে। এও শুনলাম ঐ ফ্ল্যাটের পাশের ফ্ল্যাটে একটা মেয়ে নাকি সুইসাইড করেছিলো। কিন্তু আমরা safe কারণ এই ফ্ল্যাটগুলোর জায়গায় নাকি বহুপূর্বে একটা কালিমন্দির ছিল। চাপ খেয়ে গেছি শুনে। মানে এই সব ব্যপার গুলো নিয়ে আমি জন্মে ভাবিনি, ইয়ার্কিও মারিনা। তাতে আমি ভীতু আখ্যায়িত হলেও I don’t mind. যদিও সেটা না দেখানোর চেষ্টা করেছিলাম। অনেকে হাসাহাসি করেছিলো, আবার অনেকে কেস্ টা সিরিয়াস্ দিল পে দিমাগ পে নিলো। যাদের মধ্যে অন্যতম আমরা ৮ জন। সেদিন খাওয়ার পর রাস্তায় হাঁটার নো সিন্। ছুট মেরে ঘরে ফেরে তিনটে খাট জুড়ে দিলাম। জড়ো করা হল সবার কাছে যত সিগারেট এর প্যাকেট ছিল এবং ৭জন একসাথে ঐ জোড়া খাটে ঘুম। বাকি একজন একটু সাহসী ছিল আর কি। ভয় দ্বার কেটে যাওয়ার অনেক পরেও তিনটে খাট জোড়া ছিল। হস্টেল ছাড়ার আগে সেই scene টা বার বার মনে পড়ছিল।
ফার্স্ট ইয়ার হস্টেলে থাকাকালীন দোল পড়েছিল। হুলিয়ে just হুলিয়ে দোল খেললাম। বাজে যাচ্ছেতাই রং এনেছিল কেউ একটা। তাকে মনে মনে গুছিয়ে খিস্তি দিয়েছিলাম। সেই রং তোলার জন্য আমাদের RIN Supreme অব্দি ট্রাই করতে হয়েছিল। তবুও উঠল না। সবুজ হয়ে পরের দিন ক্লাসে গেছিলাম। ফিরে এসেই দেখি ভয়ানক র্যাস বেরিয়েছে। একটু টেম্পারেচার ও আছে মনে হয়। ব্যাস্ উল্টো চাপ খেয়ে ভেবে বসলাম আমার হাম হয়েছে। তারপর থেকে হস্টেলে আর দোল খেলিনি। এরপর বাওয়াল, বাওয়াল আর বিশ্ব বাওয়াল। কলেজে মারামারি। যাচ্ছেতাই লেভেলে সিনিয়র জুনিয়র খান্দযুদ্ধ। মেরিন-টেকনিক্যাল কেলাকেলি। আমাদের হস্টেলে খবর এল আমাদের বাড়ি পালানোই সেইফ। কলেজ ৭ দিনের ছুটি। আমি বরাবরই বাড়ি পাগলা। আমার রুমমেটও অল্পবিস্তর। ব্যাস্।
এক দুই তিন চার
গেল কত সেমিস্টার
গেল কত সেমিস্টার
দিনগুলো গেল বয়ে
বন্ধুত্বের আবেশে
কখন যে এল সে
হৃদয়টা গেল ছুঁয়ে
হয়তো তোমারই জন্য
হয়েছি প্রেমে বন্য,
জানি তুমি অনন্য,
তবু আশার হাত বাড়াই।
হয়েছি প্রেমে বন্য,
জানি তুমি অনন্য,
তবু আশার হাত বাড়াই।
এবার তোমার কথা লিখতে গেলে অনেকটা লিখতে হবে। এখানে না হয় নাই লিখলাম। এই প্যারাটা স্কিপ করে গেলাম।
ফার্স্ট সেম না সেকেন্ড সেম ঠিক খেয়াল নেই। Physics পরীক্ষার আগের দিন জল নেই হস্টেলে। কি কাণ্ড। ব্যাস্। খাটুনি। দূর থেকে বালতি করে জল আনতে হয়েছিল। কি দিন ছিল। এমন অনেক সাবজেক্ট ছিল যা মাথার উপর দিয়ে গেছে। তখন একটাই ভরসা ছিল আমাদের পূজনীয় চোথাবাবা।
আর যেটা ভালো ব্যাপার ছিল হস্টেলে প্রচুর হাঁটার জায়গা ছিল। আমি ও আমার দু একটা রুমমেট বরাবরই নিশাচর। সেম্ এর আগে যখন রাত জেগে গাত নিচ্ছি তখন প্রায়ই চাদর মুড়ি দিয়ে ৩টে সাড়ে ৩টের দিকে ছাদে হাঁটতে বেরতাম। কি আর? ভডকা। দারুন লাগতো। বলে বোঝানোর নয়। এরকম বড় ছোট খুচরো টুকরো টুকরো হাজার মুহূর্ত পরে আছে ITMEতে। মুড অফ হলে এমন জায়গার তুলনাই নেই। পাগলা হাওয়া, চারপাশটা ফাঁকা, হ্যাঙ্গওভার-হ্যালুসিনেশন অসাধারণ।
আর কি???? আরও অনেক কিছু। কিন্তু সবটা এক এপিসোডে বলে দিলে কি করে চলবে কাকা? তাই আবার ভাঁট বকতে চলে আসব। So more boring gappos n sentus are coming. ততক্ষণে দীপতনয় ঘোষকে একটু মিস্ করুন।
No comments: