যারা এখনো শুধুই বন্ধু, বন্ধুর চেয়ে বেশী হয়েও অন্ধ, কিংবা জানালার একটা পাল্লা বন্ধ, একটু ভাল আর একটু মন্দ

তাদের জন্যেই কিছু এবড়ো খেবড়ো ছন্দ, তাদের জন্য কবিতা-গল্প, অল্প স্বল্প প্রেম, আড্ডা, হঠাৎ মেঘ এবং বৃষ্টি।

ল্যাদ ল্যাদ আর ল্যাদ

সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন আমি যেন ল্যাদ খেয়ে চলি।

১.
সুখী থাকব, খুশি থাকবো, শান্তিতে বিন্দাস্ ল্যাদাক্রান্ত হয়ে শুয়ে থাকা এবং কিছু গম্ভীর ব্যাপারে সামান্য ফুট কাঁটা মন্দ নয় একেবারেই। কিংবা মাঝেমধ্যে দুঃখবিলাস থোবড়াখানা নিয়ে ছেঁড়া জিনস্ আর ছেঁড়া ব্যাগ এবং আরও কিছু ছেঁড়া জিনিষপত্র নিয়ে ৮বি চত্বরে একটু হাবভাব নেওয়া যেত। আরেকটু কেত মেরে বলতে গেলে চোখে একটা চৌকো কার্বন চশমা বসাতে পারলে হেভি জমত। কিন্তু আর যাই হোক জীবনে অনেক কিছুই করা হল না। বাসে আগে উঠে অধিকাংশ সময়ই পরে আবির্ভূত ব্যক্তির কাছ থেকে ফাঁকা সিট টা ছিনিয়ে নেওয়া হল না। জোর গলায় কনডাক্তার এর কাছ থেকে স্টুডেন্ট কন্সেশন এর আর্জিও পেশ করা গেল না। যে সব লোক কে অসহ্য লাগে তাদের প্রকাশ্যে একটি চর বা নিদেনপক্ষে একটাও খিস্তি এমন কি নিরামিষ খিস্তি অব্দি দিয়ে ওঠা গেল না এবং সেটার জন্য আমি নিজস্ব চম্পু জীবনবোধ ও ল্যাদকেই কাঠগড়ায় নিলডাউন করাতে পারি। করাব তবে এখন নয় একটু পরে।

২.
ল্যাদ-ঘুম-স্বপ্ন-ফ্রিউড
ছাদ-ঘুড়ি-ইনফেচুয়েশন-নেশা
উড়ে যাওয়া নেটওয়ার্ক প্রেম নিয়ে ব্যস্ত বন্ধুসকল- সুপ্ত প্রেম ছিল এবং আছে। যার প্রতি তাকে কলেজে চুম্বনরত অবস্থায় আবিস্কার--বিচিত্র হতাশা। এরপর আবিস্কার করা পৃথিবীতে আমিই দুঃখী। আমার কপালে ফুটোর ব্যাসার্ধ সব চেয়ে বেশী---হঠাৎ এ জীবনবোধের পুনরুজ্জিবীকরন। অনেকটা দেখিয়ে দেবো টাইপ আলোড়ন-জাগরণ, অতি সাধারণ আলোকবাদ। জ্ঞান আহরণ এর প্রচেষ্টায়, মায়ের মুখে হাসি, বন্ধুমহল থেকে আঁতেল ট্যাগ প্রাপ্তি, রাত জেগে ফ্রিউড গাত। দিন দুয়েকের মধ্যে ফ্রিউড আর পোসাচ্ছে না। খিস্তি-ল্যাদ। ল্যাদ-ল্যাদ-ল্যাদ-ল্যাদ। আহাঃ কি শান্তি।

৩.
কোন এক জ্ঞানীগুনী ব্যক্তি বলেছিলেন পৃথিবীর বেশ কিছু মহৎ রিয়েলাইজেশন তথাকথিত কুঁড়ে মানুষেরাই জনসমক্ষে এনেছেন। গভীরভাবে এই বাক্যে বিশ্বাস করতে চাইছি বিগত বেশ কিছুদিন ধরে। বিশ্বাস করতে চাইছি জানলা দিয়ে “জল পড়ে পাতা নড়ে দেখতে দেখতেই আমি অবিশ্বাস্য রকমের অন্যরকম কিছু একটা দেখে ফেলব বা রিয়েলাইজ করে ফেলব এবং সেই নিমিত্ত আমি হাত বাড়িয়ে জলের গ্লাসটা নেবার মত মেকানিক্যাল এনার্জি sacrifice করতে পারিনা। খুব জল তেষ্টা পেলে নিজের সাথে একটা ছোট মিটিং করে নেই। এখন খাব, হাত বাড়াব? আরেকটু পরে খেলে চলবে না??? আচ্ছা থাক না আরেকটু পরে যখন খাট থেকে নামব তখনই না হয়। সুতরাং এখন নয় একটু পরে।

৪.
আমি মশারি টাঙ্গাই না বছর ১২ হবে। মশাদের বলি এখন নয় একটু পরে আসিস তোরা। উপোষ করি, আপোষও। বন্ধুত্বে পাপোষ ও হতে রাজী।




গান গাবুনি উঠোন বাঁকা,
প্রাচীন ব্যথা দিচ্ছে ছ্যাঁকা
বুঝেও দেখাও ভেলকি কাকা


কেলিয়ে পড়ে থাকি
ল্যাদের খাতায় উপস্থিত
বাজার জুড়ে ফাঁকি


রোদ্দুরটা ঘুম ভাঙালে
আস্তে বলি একটু নড়ে
এখন না রে একটু পরে।



৫.
ব্রেকফাস্টের সাথে আমার ব্রেক আপ হয়েছে অনেকদিন আগে। আসলে আমার সময়ের সাথে ব্রেকফাস্টের সময় মিলল না কিছুতেই। অনেক বলেছিলাম এখন নয়, একটু পরে। লাঞ্চ ডিনার সবই এভারেজ লোকের (নরমাল) থেকে একটু পরেই করি আমি। বেশ নির্জনে থাকার একটা অভ্যেস বানিয়ে ফেলেছি। রাস্তায় চেনা লোকজনের সাথে দেখা হলে খুব চাপে পড়ে যাই। হাসতে ল্যাদ লাগে। আর দুটোর জায়গায় তিনটে কথা বেরোলেই। ল্যাদ-ঘুম-স্বপ্ন-ফ্রিউড গুলিয়ে যাচ্ছে। কাকু আমি চলি এখন, একটু পরে বেরোতে হবে।

৬.
হস্টেলে থাকলে দুপুরে লাঞ্চ করে ক্লাস যাওয়া- মাগো তারচেয়ে সন্ন্যাস ঢের ভাল। সন্ন্যাস নিলেও তো হত। Recently আরেকটা চাপের ব্যপার হয়েছে। পরীক্ষার সময় বিশেষত হ্যাজানোর সাবজেক্ট গুলোতে লিখতে বিষম ল্যাদ লাগে আমার। অন্তর আত্মার সাথে তীব্র ঝগড়া করে হেরে গিয়ে থেকেই যাই তিন ঘণ্টা। কারন ঝগড়া করতেও ল্যাদ লাগে আমার। লাঞ্চ করতে তিনতলা থেকে একতলায় নামা- আপনারা কি আশা করেন?? ওটা ইতিহাস হয়ে গেছে। ভুল করে লাঞ্চ করতে গেলে বিষম আওয়াজ খাই। ল্যাদ আমার লাখ লাখ attendance খেয়েছে। এই তো এই সেমিস্টারে খাচ্ছে এবং আজীবন খাবে- তাতে আমার বিন্দুমাত্র অভিযোগ নেই।

৭.
আমি সকলের মত সকালে নিজেকে সত্যদ্রষ্টা ভাবি
আমি জাপানিজ ওয়াইফ জোছনায় লিসেনারস্ দের ছবি
আমি নির্জন দ্বীপে নির্বাসিত রোমাঞ্চে সুড়সুড়ি
ঘুম-স্বপ্ন-নিউরন বেয়ে ফ্রিউডের হামাগুড়ি
লিখতে বসলে দুবার ঢুলে বুনছি মহাকাব্য
দুটো অধ্যায় ভেবেই ভাবছি আবার কালকে ভাববো।

৮.
কিন্তু আপনাদের হেভি ধৈর্য। পরে ফেলেছেন এদ্দুর। বেশ বেশ। আরও অনেক কথা বলার ছিল। গঞ্জিকা জীবনচরিত সম্পর্কে, গম্ভীর সব উপলব্ধি সম্পর্কে। বলব সবই বলব তবে এখন নয়, একটু পরে। বিশ্বাস করবেন না এই বাংলা টাইপ করতেও ল্যাদ খাচ্ছি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ল্যাদাক্রান্ত জেনারেশন কে দীপতনয় ঘোষের সেলাম। উপরোক্ত সমস্ত কিছু মোটেও আমার আত্মকথা বা আমার ভবিষ্যৎ এ প্রকাশ্য আত্মজীবনের অংশবিশেষ নয়। খানিকটা আমার, খানিকটা আপনার এবং ডি.জে সুকেতু বা অবাঞ্ছিত ধূমকেতুর ল্যাদপ্রেম নিয়ে সুচিন্তিত বক্তব্য রেখে নির্মল মনোরঞ্জনের অভিপ্রায়ে মোটেও আমি এই সব লিখিনি। বড্ড ল্যাদ লাগছিল। ল্যাদ কাটানোর জন্যই লিখলাম আর কি।

No comments: