যাদবপুর থেকে করুণাময়ী
যাওয়ার পথে বাসে দেখলাম একজন ভদ্রমহিলা একটি শিশুকে স্তনদান করছে। শিশুটি জারজ
কি-না সে বিষয়ে এখনো আলোকপাত না হলেও, সবাই মোটামুটি নিশ্চিত যে
ভদ্রমহিলা বেশ্যা। বেশ্যা সংযুক্ত বাক্যে ভদ্র শব্দটির ব্যবহারযোগ্যতা অবশ্য একটি
ভাববার বিষয়। সে যাই হোক, বাসের সেই অভদ্র বেশ্যাটি ব্যাতীত বাদবাকি ভদ্র
মহিলা এবং মহোদয়গণ সকলেই মোটামুটি বিব্রত। সঙ্গে দ্বীপতনয় ঘোষও কিছুটা।
যেমন, সিট
নং ডি-থ্রি এর ভদ্রপ্রেমিকাটি, যে কি-না দু’মিনিট আগে তাঁর (প্রেমিকাটি
ভদ্র বিধায় ‘তাঁর’ বানানে চন্দ্রবিন্দু-এর
ব্যবহার বাধ্যতামূলক) ঠিক পাশের সিট-এ (ডি-ফোর) বসা ভদ্রপ্রেমিকের হাত ধরে কোন
সর্বতোসুভদ্র মৈথুনরাজ্যে বিচরণ করছিলেন, এখন কেমন যেন সংকুচিত হয়ে
পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন (ভদ্রনারীদের সংকোচ বোধ এবং পায়ের উপর পা তোলা
শীর্ষক হাইপোথিসিসটি এখনো প্রমাণিত নয়) এবং তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন পাছে
ভদ্রপ্রেমিকটি অভদ্রবেশ্যাকে গুরুত্ত্বসহকারে অবলোকন না করে ফেলে!
ভদ্রপ্রেমিকটি উদাস দৃষ্টিতে
জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে আছেন এবং অভদ্রবেশ্যার দিকে চোরাদৃষ্টি (সরাসরি দর্শণ
নিঃসন্দেহে দেশ-সমাজ এবং সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে একটি অবমাননীয় অপরাধ) প্রক্ষেপনের
প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন, বাসের মধ্যভাগে এইচ সারির ঠিক পাশে হাফ-টিকিটি
স্টুডেন্ট পাসের বাদুর ঝোলা ভদ্রকিশোরটি বাসের সম্মুখভাগে তার-ই সমগোত্রীয় আরেক
ভদ্রকিশোরের দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা করছে, ড্রাইভারের পেছনে মায়ের
কোলে বসা স্কুলগামী ভদ্রশিশুটি নতুন কিছু জানার আনন্দে ফিক করে হাসছে (অবশ্য সে
জানে তাঁকে সাবধানী হতে হবে, কারণ তাঁর ভদ্র মা তাঁর এই আনন্দের হেতু
অনুধাবন করতে পারলে সেটা দুঃখে পর্যবেসিত হবে নিঃসন্দেহে), বাসের
প্রায়োরিটি সিট ওয়ান-এ বসা সত্তরোর্দ্ধ ভদ্রদাদু (যদিও পুরুষ মানুষ হয়ে
অবিবেবচক-এর মতোন লেডিস সিটে বসায় তাঁর ‘ভদ্রতা’ প্রশ্নে
কিঞ্চিত বাকবিতণ্ডা রয়েছে) বারবার দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে এবং গলা
খাকাড়ি দিয়ে স্পষ্ট জানান দিচ্ছেন তাঁর (ভদ্রতা বিষয়ক বাকবিতণ্ডা-টির সমাধান
যেহেতু এখন আর সম্ভবপর নয় তাই চন্দ্রবিন্দু-এর ব্যবহার অপরিবর্তণীয় রাখলাম)
অনুনোমোদন এরূপ লোকচক্ষুসম্মুখপতিতাবৃত্তির।
বাসের সেই অভদ্র বেশ্যাটি
ব্যাতীত বাদবাকি ভদ্র মহিলা এবং মহোদয়গণ মোটামুটি সকলেই বিব্রত নিঃসন্দেহে। তাই
ভদ্রতার সুরক্ষার জন্যে দ্রুত এবং সংক্ষিপ্ত যাত্রার প্রার্থণারত অনেকেই (সকল একটি
অপরিণামদর্শী শব্দ) সেকারণেই হয়তো কুশীলব বদলায় ক্ষণে ক্ষণে কিন্তু দৃশ্যপট নয়।
অবশেষে একসময় অভদ্র বেশ্যাটির স্টপ-ও চলে আসে। নেমে যায় সে এবং নবজাতক
অভদ্রশিশুটি (শিশুটির জারজ হওয়ার সম্ভাবনপূর্ণ গবেষণাপত্রটির, ‘তার’ অনুপস্থিতি
এবং যথাযোগ্য প্রমাণের অভাবে সম্পাদন ও সফল পরিসমাপ্তি আনয়ন অসম্ভব)।
কিছুটা স্বস্তি? হয়তো!
অনেকেই অবিব্রত হন, নতুন
কোন ভদ্রপ্রেমিক-প্রেমিকা যুগল আবার নিজেদের মাঝে ব্যস্ত হন, ভদ্রকিশোরদ্বয়
চোখের ইশারায় বোধ হয় খুঁজে পায় নতুন কোন ‘সাবজেক্ট’ (জনযানবাহনে
দণ্ডায়মান অবস্থায় ‘সাবজেক্ট’ বিষয়টির অভাব হয় না), ভদ্রশিশুটি
তাঁর ভদ্র মার ব্যাগে রাখা টিফিনের গন্ধে আমোদিত হয় আর অ/ভদ্র দাদু শুধু একটা
দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রার্থণা করেন অভদ্র নবজাতকশিশুটির জন্যে, যাতে
সে (অভদ্র নবজাতকশিশুটি) আর দশ বা পনেরো বা পঁচিশ বা সত্তর বছর পর একজন ভদ্রশিশু
বা ভদ্রকিশোর বা ভদ্রপ্রেমিক বা ভদ্রদাদুতে পরিণত হতে পারে এবং কোন জনযানে উঠে যদি
দ্যাখে কোন মা (প্রকৃতপক্ষে অভদ্রবেশ্যা) নিজ ক্ষুধার্থ নবজাতককে স্তনদান করছে
লোকচক্ষুসম্মুখে তবে যেন নিমিষেই বুঝে নিতে পারে যে, ভদ্রমহিলা বেশ্যা।
বেশ্যা না হলে এমন
বেহায়াপনা কোন ভদ্রমহিলার! ছিঃ!
বেশ্যা সংযুক্ত বাক্যে ভদ্র
শব্দটির ব্যবহারযোগ্যতা অবশ্য একটি ভাববার বিষয়।
No comments: